কালা জ্বর কী , কেন হয়, কালা জ্বর হলে করণীয় কী এবং কালা জ্বর থেকে বাঁচার উপায় কী?
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
কালা জ্বরের লক্ষণ । |
কালা জ্বর কী?
কালা + জ্বর = কালাজ্বর । এই রোগে শরীরের রং কালো হইয়া যায় বলিয়া উহাকে কালা জ্বর বলে । কালাজ্বরের জীবাণু কীভাবে মানবদেহে প্রবেশ করে , উহার সঠিক তত্ত্ব এখনো আবিষ্কৃত হয় নাই ।এই সংক্রামক রোগের কারণ এক প্রকার প্রোটোজায়া । আবিষ্কারের নামে এই পরজীবীর নামকরণ করা হয় লিসম্যানিয়া ডোনভ্যানি । গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সচরাচর কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশী । স্যান্ডফ্লাই নামক এক প্রকার মাছির দ্বারা এই রোগের বিস্তার ঘটে । বর্তমানে আমাদের দেশে এই রোগ নাই বললেই চলে ।
অনেকের মতে স্যান্ডফ্লাই মাছি এই রোগে আক্রন্ত রোগীর দেহ হইতে রক্ত চুষিবার সময় রোগ জীবাণু বহন করিয়া সুস্থ মানবদেহে ঐ রোগের জীবাণু প্রবেশ করিয়া দেয় । অবর্জনাযুক্ত স্থানে কিম্বা পচা নর্দমাযুক্ত স্থানে এই মাছি ডিম পাড়ে বলিয়া সেই স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখিতে হবে ্
কালা জ্বরের লক্ষণ ?
১ । কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর প্রধান লক্ষণ হইলে জ্বর, পরে দ্রুত প্লীহা ও যকৃত বৃদ্ধি পায় ।
২ । সকল সময় জ্বর, কিম্বা জ্বরের তাপমাত্রাও অধিক হয় না ।
৩ ।ঠ জ্বর থাকা বা না থাকা উভয় অবস্থাতেই কেবল প্লীহা বৃদ্ধি পায় । তবে উহা খুব নরম থাকে শক্ত হয় না ।
৪ । অল্প অল্প জ্বর হয় এবং উহা বহু দিন পযন্ত স্থায়ী হয় ।
৫ । দীর্ঘদিন ভুগিয়া রোগী নিতান্ত দুর্বল হয় এবং রক্তহীন হয় । সর্দি -কাশি প্রভৃতি নানা উপসর্গ দেখা দেয় । শরীরের চামড়া ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে এবং চুল পড়ে যায় ।
৬ । হাত দিয়ে পেট টিপিলে প্লীহা বা কলিজা হতে ঠেকে । তবে প্লীহাতে ব্যাথা তাকে না ।
৭। টাইফয়েডের মত জিহ্বা লেপাবৃত থাকে না । কয়েকদিন তাপ কম থাকিয়া আবার বৃদ্ধি পায় ।
৮ । অনেক সময় কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর দাঁতের গোড়া এবং নাক দিয়া রক্তক্ষরণ হইতে পারে ।
৯। ক্ষুধা কমে না বরং দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় ।এইরুপ রাক্ষুসে ক্ষুধা বেশী দিন থাকে না । বেশী খাইলে পেটে বদহজম দেখা দিতে পারে ।
১০ । বুক ধড় পড় করে ও শ্বাসকষ্ট হয় । রোগী খুব দুর্বল হয় ।
১১। চামড়া খসখসে হয় , পরে চামড়ায় ঘা দেখা দেয় ।
১২ । ফুসফুসে আক্রমণে বেশীর ভাগ রোগী মারা যায় । রোগ প্রথমে জটিল থাকে না তবে জটিল রোগীর বাঁচার আশা নিতান্তই কম ।
১৩ । দিনে রাতে ২ বার জ্বর বৃদ্ধি এই রোগের লক্ষণ ।
রোগের লক্ষণ ও দেহ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত উপরোক্ত বিবরণী ছাড়া রোগ নির্ণয়ের অন্যান্য পন্থাবলীঃ
ক) রক্তে শ্বেতকণিকার ( W.B.C / T.C ) ক্রম হ্রাসপ্রাপ্তি ।
খ ) ফরমল জেল টেষ্ট পজিটিভ হয় ।
গ) চোপরা টেষ্ট-জ্বর শুরু হইবার ৩ মাসের মধ্যেই এই টেষ্ট পজিটিভ হয় ।
ঘ ) প্রায় সব রকম অস্থিমজ্জা থেকে প্রাপ্ত রস এবং কখনো রক্ত কালচার করে ফলাজেলা বিশিষ্ট লিসম্যানিয়া প্রদর্শন করা যাইতে পারে ।
কালা জ্বর দুই প্রকার ঃ
১ । একিউট কালাজ্বর ও ২ । ক্রণিক কালাজ্বর ।
১) একিউট কালাজ্বর ঃ একিউট কালাজ্বরে রোগীর দেহের তাপমাত্রা ১০২ ডিগী হইতে ১০৩ ডিগী পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় । অল্প দিনের জ্বরে প্লীহা ২/৪ আঙ্গুল বৃদ্ধি পায় । রোগীর বদহজম হয় । অন্যান্য জ্বরের ন্যায় এই জ্বরে রোগী তেমন ক্লান্ত হয় না ।
২) ক্রণিক কালাজ্বর ঃ ক্রোণিক কালাজ্বরে ও প্লীহা ও যকৃত বৃদ্ধি পায় । বদহজম সবসময় লেগেই থাকে । তবে ক্ষুধা বেশি থাকে । খোরাক বাড়িয়া যায় । শরীরে খোস-পাচড়া জাতীয় রোগ দেখা যায় । । মাথার চুল উঠে যায় এবং শরীর বিশ্রী ও ফ্যাকাসে হয় ।
কালাজ্বর ও ম্যালেরিয়ার মধ্য পার্থক্য ঃ
কালাজ্বর |
ম্যালেরিয়া |
১। দীর্ঘদিন কালাজ্বরে ভুগিবার পর রোগী নিস্তেজ হয় । |
১। অল্প দিনেই ম্যালেরিয়া
জ্বরে আক্রান্ত রোগী নিস্তেজ হয় । |
২ । কালাজ্বর কম থাকে
এবং প্লীহা দ্রুত বৃদ্ধি পায় । |
২ । ম্যালেরিয়া জ্বর
বেশী হয় এবং কিছুদিন পরে প্লীহা বৃদ্ধি পায় । |
৩। কালাজ্বরে প্লীহা
নরম থাকে । |
৩ । ম্যালেরিয়া জ্বরে
প্লীহা অপেক্ষাকৃত বেশী শক্ত অনুভূত হয় । |
কালা জ্বরে চিকিৎসাঃ
১) কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর পেটের সমস্যা থাকিলে হজমের জন্য Pancreatin ( প্যানক্রিয়াটিন ) যুক্ত ঔষধ দেওয়া যায় । যেমন- Tab. Suzyme or Tab. Crezyme or, Tab. Zymet or, Tab. A-zyme or Tab. Festal-N ।
মাত্রাঃ ১ টি বড়ি করে রোজ ২/৩ বার খাবার পরে সেব্য ।
২। আমাশয়ের জন্য বা দাঁতের গোড়ায় ঘা - এর জন্য Metronidazol ( মেট্রোনিডাজল ) যুক্ত ঔষধ ঃ যেমন- Tab. Metro or, Tab. Amodis, or Tab. Filmet, or Tab. Flagyl, or Tab. Flamid, or, Tab. Metryl etc.
মাত্রাঃ বয়স অনুসারে ১ বড়ি ২০০ মিঃ গ্রাঃ / ৪০০ মিঃগ্রাঃ করিয়া প্রত্যহ তিন বার সব্য ।
৩ । পাতলা পায়খানার জন্য Loperamide ( লোপেরামাইড ) যুক্ত ঔষধ যেমন- ঃ Cap. Imodum, or Cap. Imotil, or Cap. Loper, or Cap. Loperin, or Cap. Lopamid, or Cap.Lomosec etc.
মাত্রাঃ প্রথমবারে ২ টি একসাথে ও পরে ১ বড়ি করে ৩/৪ বার ।
অথবা,
Tetracycline ( টেট্রাসাইক্লিন ) বা Oxytetracycline ( অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ) যুক্ত ঔষ ঃ Cap. Servitet 250 mg. or Cap. Renamycun 250mg. or, Cap. Imperacin 250mg.
মাত্রাঃ বয়স অনুসারে ১/২ টি ক্যাপসুল ৬ ঘন্টা পর পর ।
৪।কালাজ্বরে রক্তশূন্যতা দেখা যায় বলিয়া রক্তবর্ধ ক ঔষধ অর্থাৎ আয়রণ টনিক দিতে হয় ।
তরল আকারেঃ Syp. Ferocip or Syp. Microferon or Syp. Caron or Syp. Feromat or Syp. Fercupar or Syp. Ferocin or, Syp. Hematol or Syp. Sinafaron or Syp. Dyaferon or Syp. Ferigun or Syp. Viron or Syp. Aristoferon or Syp. Ferosin etc.
মাত্রাঃ বয়স অনুসারে ১/২ চামচ করিয়া রোজ ২/৩ বার সেবন করতে হবে ।
ক্যাপসুল আকারে ঃ Cap. Feridex or Cap. Femicap or Cap. Feolet or Cap. Ferate or Cap. Fe- Plus or Cap. Folferrum or Cap. Dipiferol or Cap. Haemodin etc.
মাত্রাঃ ১ টি ক্যাপসুল রোজ ২ বার আহারে পর সেব্য ।
৫। দাঁতের গোড়ায় ঘা দেখা দিলে ঃ Cap. Moxyvan or Cap. Moxacil or Cap. Fimoxyl or Cap. Moxin or Cap Servimox or Cap. Amplin or Cap. Penatamox or Cap. Pharmoxyl etc.
মাত্রাঃ ২৫০ মিঃ গ্রাঃ বা ৫০০ মিঃ গ্রাঃ এর ১ টি ক্যাপসুল রোজ ৩ বার খাবার পর সেব্য ৫ থেকে ৭ দিন ।
অথবা, Doxycycline ডক্সিসাইক্লিন যুক্ত ঔষধ ঃ Cap. Doxycap 100mg বা, Cap. Doxin 100mg
মাত্রাঃ রোজ ২বা খাবার পর সেব্য ।
৬ । ভিটামিন - সি ( Vitamin - C ) অথ্যাৎ Ascorbic Acid ( অসকরবিক এসিড ) যুক্ত ঔষধঃ Tab. Ceevit 250mg or Tab. Vasco 250mg or Tab. Ascovit 250mg or Tab. Hi-C 250mg or Tab. Ascoson 250mg or Tab. Ascobex 250mg etc.
মাত্রাঃ ১ বড়ি করে রোজ ৩ বার চুষে খেতে হবে ।
৭ । পেট ফাঁপা বা পেটে গ্যাস থাকলে Metocloparamide ( মেট্রোক্লাপ্রামাইড ) যুক্ত ঔষধ ঃ Tab. Motilon 10mg , Tab. Maxil 10mg, Tab. Mepralon 10mg ।
মাত্রাঃ আহারের পূর্বে ৫/১০ মিনিট ১ বড়ি করিয়া দিনে ২/৩ বার ।
ঐ সঙ্গে Tab. Perkinil 5mg, or Tab. Kdrine 5 mg.
মাত্রাঃ হাফ বড়ি করে ২/৩ বার সেব্য । অথবা,
Domperidone( ডমপেরিডন ) যুক্ত ঔষধ ঃ Tab. Omidon, or Tab. Don- A or Tab. Domin or Tab. Motigut or Tab. Diflux or Tab. Domiren or Tab. Dopadon or Tab. Apuldon or Tab. Vave or Tab. Cozy etc.
মাত্রাঃ ১ বড়ি করে রোজ ৩ বার খাবার ৩০মিঃপূর্বে সেব্য ।
৮ । দুর্বলতার জন্য ভিটামিন জাতীয় যে কোন গ্ররুপের ঔষধ দেওয়া যায় তবে যদি পেটে গন্ডগোল থাকে তবে দেওয়া যাবে না ।
৯ । পেটের গোলমাল থাকিলে কৃমির ঔষধ দিতে হইবে ।
পথ্য বা আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ঃ
১ । ক্ষুধা বেশি হইলে অল্প খাবার খাইবে , বেশি খাইলে পেট খারাপ করতে পারে ।
২ । তরল পথ্য হিসাবে বার্লি, এরারুট, ফলের রস , হরলিক্স জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে ।
৩ । কাগজী লেবুর রস খাইলে বেশ উপকার পাওয়া যায় ।
৪ । স্যান্ডফ্লাই মাছি ধ্বংসের জন্য গ্যামাক্সিন পাউডার ছিটাতে হবে ।
৫ । ব্যবহারের কাপড় - চোপড় জীবাণু মুক্ত রাখিতে হইবে ।
৬ । বমি বন্ধ করার জন্য এন্টি -এ্যামিটিক জাতীয় ঔষধ দিতে হইবে ।
৭ । শরীর দুর্বলের জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় ঔষধ দিতে হবে ।
৮ । CFT for Kalazar Test করিলে কালাজ্বর বুঝা যাইবে ।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment