হুপিং কাশি কী? কেন হয় । হুপিং কাশি হলে কী করবেন ?

Image
 ইহা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত একটি সংক্রামক ব্যাধি । যে কোন বয়সের লোক- এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।তবে শিশুদের মধ্যে ( ২ হইতে ৫ বছরের ) শিশুরা এই রোগে ভোগিয়া থাকেন । হেমোফেলাস পারটিউসিস নামক জীবাণু দ্বারা শিশু ও বালক - বালিকারা এই রোগে আক্রান্ত হয় । সর্দি হইতে কাশি , কাশি শুকনা হইলে তাহা প্রায়েই হুপিং কাশিতে পরিণত হয় । পরে উহা খারাপের দিকে ধাবিত হইতে পারে । আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কেহ আসিলে এই রোগ হইবার সম্ভাবনা থাকে ।রোগ জীবাণু সংক্রামিত হইবার ৭/২০ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায় । হুপিং কাশির টিকা দিলে এই রোগ আর হয় না। ইহাও সরকার কর্তৃক দেওয়া হয় । য়ে কারণে এই রোগ আর দেখা যায় না । লক্ষণঃ ১ । প্রাথমিক অবস্থায় রোগী সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয় ও তৎসঙ্গে শুধু জ্বর হয় । এই জ্বর পরে বৃদ্ধি পাইয়া ১০০ ডিগ্রীর উপর পর্যন্ত হইতে পারে । ২ । ঘন ঘন কাশের পর কাশ হইয়া শ্বাস-প্রশ্বাস হইবার উপক্রম হয় । কোন কোন ক্ষেত্রে চোখের কনজাংটাইভাতে রক্ত জমিয়া যায় ।  ৩ । কাশি খুব দ্রুত বেড়ে যায় । কাশির বেগ বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় । প্রায় দম বন্ধ হইবার উপক্রম হয় ।   ৪। রোগী কাশির সহিত ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহ...

ম্যালেরিয়া জ্বর কী, কেন হয় বা, ম্যালেরিয়া জ্বর হলে করণীয় কী এবং তার চিকিৎসা ।

 ম্যালেরিয়া জ্বর 

ম্যালেরিয়া রোগীদের ছবি ।

জীবাণুতত্ত্ববিদগণ বলেন, “ প্লাজমোডিয়াম ” নামক এক প্রকার প্রটোজোয়া মানবদেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে । এই রোগের প্যারাসাইটগুলি ম্যালেরিয়া রোগীর শরীরে বিদ্যমান থাকে । স্ত্রী জাতীয় এনাফিলিস মশা কামড়ে এই রোগের জীবাণু মানাব দেহে প্রবেশ করে । অবশেষে যখন এই মশা অক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেওয়ার পর সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয় তখন সুস্থ ব্যক্তি ও ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয় । বাংলাদেশ ও ভারতে এই রোগের প্রাদূরর্ভাব খুবই বেশি । আজকাল কহুলাংশে ম্যালেরিয়া জ্বর কমিয়া গেছে ।


ম্যালেরিয়া জ্বরে লক্ষণ ?

১। রোগী শীত শীত অনুভব করে, হাত - পা ঠান্ডা হয় , প্রবল কম্প দিয়া জ্বর আসে । রোগী এত বেশি কাঁপিতে থাকে যে , লেপ ও কম্বল দিয়া রোগীর সমস্ত শরীর চাপা দিলেও কম্পন বন্ধ হয় না এবং মাথা ব্যথা , বেদনা হয়, এমন অবস্থা বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় । 

২। দেহের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরিশেষে ১০৩’ - ১০৪’ ডিগ্রী হয় , রোগী তখন প্রলাপ বকিতে থাকে । উত্তাপ বৃদ্ধি পাইবার পর রোগী গরম অনুভব করে , কম্পন অল্প হয় এবং নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হয় । রোগী শরীর কাপড় রাখিতে পারে না । 

৩ । জ্বর ছাড়িবার সময় রোগীর ভীষণ ঘাম হয় এবং তাপমাত্রা কমিয়া যায় । 

বিঃদ্রঃ এই জ্বরর বিশেষ বিস্তারিত বিবরণ লিখিয়া পুস্তকের আকার বৃদ্ধি করিব না । কারণ আমার মনে হয় আপনারা সকলেই এই ম্যালেরিয়ার জ্বর সর্ম্পকে কম বেশি ধারণা আগে থেকেই জানেন । 


ম্যালেরিয়া জ্বরের ৩ টি অবস্থা

১। শীতাবস্থা ( Cold Stage ), ২ । উষ্ণাবস্থা ( Hot Stage ) ৩। ঘর্মাবস্থা ( Sweating Stage ) ।

ম্যালেরিয়া জ্বরের সচরাচর এই তিনটি অবস্থা দেখা যায় । অর্থাৎ শীত করিয়া জ্বর আসা , তৎপর শরীর উষ্ণ হইয়া গাত্রতাপ বৃদ্ধি হওয়া এবং ঘাম দিয়া জ্বর একেবারে ছাড়িয়া যাওয়া । জ্বরে অত্যাধিক পিপাসা হয় । এই তিনটি লক্ষণের ষ্পষ্ট সমাবেশ দেখিলে তাহাকে ম্যালেরিয়া বলিয়া বুঝিতে হয় । 

অনেক সময় দেখা যায় , প্রায়ই ম্যালেরিয়া জ্বর কোন এক নিরুপিত সময়ে আসে । কিন্তু মাঝে মাঝে আবার ব্যতিক্রম ঘটে । তাই তাহাকে  ৩ ভাগে ভাগ করা হয় । 

১ । প্রত্যহ একবার জ্বর । 

২ । একদিন অন্তর জ্বর বা পালি জ্বর । 

৩ । দুইদিন অন্তর জ্বর বা পালি জ্বর । 

অবিরাম ম্যালেরিয়া জ্বর ঃ এই প্রকারের ম্য়ালেরিয়া  জ্বর সকল সময় থাকে  এবং টাইফয়েডের সহিত ইহার ভুল  হইতে পারে । তবে কখনও জ্বরের মাত্রা কমে, আবার কখনও ‍বৃদ্ধি পায় , কিন্তু  Step Ladder like হয় না । রোগীর জিহ্বা শুকনা এবং বাদামী রং হয় । অনেক সময় রোগীর ডায়রিয়াও দেখা যায় । 

ক্রোণিক অবস্থাঃ কিছুদিন জ্বর হয় , আবার কমিয়া যায় , আবার জ্বর হয় । এমনভাবে বার বার জ্বর হইলে প্লীহা বাড়ে । অনেক দিন পর প্লীহা শক্ত হয় , লিভার বাড়ে ও রক্তহীনতা দেখা যায় । পরিশেষে চক্ষু হলদে হয়, অর্থাৎ রোগী জন্ডিসে আক্রান্ত হয় । তবে আজকাল ক্রোণিক ম্যালেরিয়া বিশেষ দেখা যায় না । 

ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া ( পার্নিসাস ম্যালেরিয়া ) ঃ এইসব রোগীর জ্বর দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা ১০৪ - ১০৭ ডিগ্রী উঠিতে পারে । রোগী ভুল বকে এবং অজ্ঞান হয় । অনেক সময় মাথায় অবিরত পানি ঢালিলেও জ্বর কিছুতেই নামিতে চাহে না । রক্ত পরীক্ষা করিলে ম্যালেরিয়া জীবাণু পাওয়া যায় । সেইজন্য সম্ভব হইলে রক্ত পরীক্ষা করিয়া রিপোর্টের উপর নির্ভর করিয়া সঙ্গে সঙ্গে কুইনাইন ইনজেকশন দিতে হয় ।  


ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা ঃ

নিম্নলিখিত  ঔষধ ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করিতে পারে । তাই প্রয়োজনমত নিচের দুই একটা ঔষধ সেবন করা যাইতে পারে । 

১ । Chloroquine phos. ( ক্লোরাকুইন ফসফেট ) যুক্ত ঔষধ ঃ  Tab. Pharmaquine ( ফার্মাকুইন ) বা, Tab. Nivaqine-P ( নিভাকুইন পি )বা, Tab.Resochin ( রিসোসিন ) বা, Tab. Avloquin ( এ্যাভলোকুইন ) বা, Tab. Malaquine ( ম্যালাকুইন ) বা, Tab. Neoquin ( নিয়োকুইন )  । 

মাত্রাঃ প্রথমে ২৫০ মিঃ গ্রাঃ এর ৪ টি বড়ি একসাথে তার পরে ২ টি বড়ি ৬ঘন্টা পর । পরের দিন হইতে ১ টি বড়ি দিনে ২ বার ৩ দিন । কম বয়স্কদের মাত্রা বড়দের অর্ধেক । ২ - ৫  বৎসর সিকি মাত্রা । ( ২ + ০ + ২ ) দিন এবং ১ + ০ + ১ পরের ৩ দিন । 

বাচ্চাদের জন্য ঃ Seemaquine ( সিমাকুইন ) বা, Avloquin Syrup ( এ্যাভলোকুইন সিরাপ ) বা, Nivaquine Syrup ( নিভাকুইন সিরাপ ) বা, Chlorolin Syrup ( ক্লোরোলিন সিরাপ ) বা, Quinal Syrup ( কুইনাল সিরাপ ) । 

মাত্রাঃ ১ বৎসরের নীচে ১/২ চামচ খাবার ৬ ঘন্টা পর পর ১ দিন । তারপর দিন থেকে ১ চামচ করে দিনে  ২ বার ৩ দিন । ৪/৫ বৎসরের উপরে হলে প্রথমে ২ চামচ করে দিনে ২ বার । তার পর ১/২ চামচ দিনে ২ বার ৩ দিন । অথবা,

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ঃ Tab. Premaquine ( প্রিমাকুইন ) ১৫ মিঃ গ্রাঃ প্রত্যহ ১ টি বড়ি করে রোজ ২ বার ১৪ দিন । 

২ । তবে ম্যালিরিয়া জ্বর অনুমান বা সন্দেহ  করিলে বা প্রতিরোধক হিসাবে Sulfadoxine + Pyrimethamine যুক্ত ঔষধ যেমন- Tab. Malodoxin বা, Tab. Malacide বা, Tab. Malarix বা, Tabl. Soloprin বা, Tab. Salfamin বা, Tab. Sulsider

মাত্রাঃ ৩ বড়ি রাত্রে একবার মাত্র এবং পুনরায় ৭ দিন পর আবার ১ মাত্রা । 

৩ । কুইনাইন ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অন্য লক্ষণগুলির ও ঔষধ দিতে হয় । হইার মধ্যে রক্তশূন্যতা প্রধান । তাই রোগীকে Iron  মিশ্রিত টনিক ব্যবহার করিতে দিতে হইবে । কেননা , রোগী রক্তহীন হয় বলিয়াই এমন ঔষধের প্রয়োজন দেখা দেয় । 

Syrup. Ferrocip বা, Syrup . Microferon বা, Syrup. Ferrolysin বা, syrup. May- flower বা, Dyaferron বা, Syrup . Aristoferron বা, ‍Syrup. Ferocin

সেবন বিধিঃ ১/২ চামচ করিয়া দৈনিক ৩ বার আহারের পর সেব্য । 

* বিঃদ্রঃ গর্ভবতী স্ত্রীলোরের  জন্য এবং রক্তশূন্যতায় quinine বড়ি বা, Injection ব্যবহার  করিতে নাই , কেননা উহাতে গর্ভপাত হইতে পারে । তবে পানিসাস ম্যালেরিয়া হইলে অনুমতি লইয়া রোগীণীর প্রাণ রক্ষার্থে উহা ব্যবহার করা যাইতে পারে । 


পথ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাঃ 

১। বেশী অসুবিধা হলে বরফ বা ঠান্ডা পানি দ্বারা হাত - পা, শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে । 

২। বেশী জ্বর মাথায় প্রচুর পানি দিতে হইবে । 

৩ । ম্যালেরিয়া হলে রক্ত পরীক্ষায় MP-test পজেটিভ ( + ve ) হইবে । 

৪। জ্বর বৃদ্ধি পাইলে বমি হইতে পারে বলিয়া জ্বরের প্রথম অবস্থায় গরম পানি ও তাহার সহিত লেবুর রস খাইতে দেওয়া যায় । 

৫ । জ্বর ছাড়িয়া যাইবার পর সাগু , বার্লি খাইতে দেওয়া যায় । তবে চিকিৎসার পর জ্বর বন্ধ হইলে সাগু, সাগুভাত , ছোট মাছের ঝোল ও পরিশেষে ভাত দেওয়া যায় । 

৬ । স্যাৎ - সেঁতে জায়গায় থাকা উচিত নয় । 

Comments

Popular posts from this blog

আসল ও নকল ঔষধের মধ্যে পার্থক্য দেখে ঔষধ কিনুন ।