ম্যালেরিয়া জ্বর কী, কেন হয় বা, ম্যালেরিয়া জ্বর হলে করণীয় কী এবং তার চিকিৎসা ।
- Get link
- X
- Other Apps
ম্যালেরিয়া জ্বর
জীবাণুতত্ত্ববিদগণ বলেন, “ প্লাজমোডিয়াম ” নামক এক প্রকার প্রটোজোয়া মানবদেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে । এই রোগের প্যারাসাইটগুলি ম্যালেরিয়া রোগীর শরীরে বিদ্যমান থাকে । স্ত্রী জাতীয় এনাফিলিস মশা কামড়ে এই রোগের জীবাণু মানাব দেহে প্রবেশ করে । অবশেষে যখন এই মশা অক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেওয়ার পর সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয় তখন সুস্থ ব্যক্তি ও ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয় । বাংলাদেশ ও ভারতে এই রোগের প্রাদূরর্ভাব খুবই বেশি । আজকাল কহুলাংশে ম্যালেরিয়া জ্বর কমিয়া গেছে ।
ম্যালেরিয়া জ্বরে লক্ষণ ?
১। রোগী শীত শীত অনুভব করে, হাত - পা ঠান্ডা হয় , প্রবল কম্প দিয়া জ্বর আসে । রোগী এত বেশি কাঁপিতে থাকে যে , লেপ ও কম্বল দিয়া রোগীর সমস্ত শরীর চাপা দিলেও কম্পন বন্ধ হয় না এবং মাথা ব্যথা , বেদনা হয়, এমন অবস্থা বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় ।
২। দেহের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরিশেষে ১০৩’ - ১০৪’ ডিগ্রী হয় , রোগী তখন প্রলাপ বকিতে থাকে । উত্তাপ বৃদ্ধি পাইবার পর রোগী গরম অনুভব করে , কম্পন অল্প হয় এবং নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হয় । রোগী শরীর কাপড় রাখিতে পারে না ।
৩ । জ্বর ছাড়িবার সময় রোগীর ভীষণ ঘাম হয় এবং তাপমাত্রা কমিয়া যায় ।
বিঃদ্রঃ এই জ্বরর বিশেষ বিস্তারিত বিবরণ লিখিয়া পুস্তকের আকার বৃদ্ধি করিব না । কারণ আমার মনে হয় আপনারা সকলেই এই ম্যালেরিয়ার জ্বর সর্ম্পকে কম বেশি ধারণা আগে থেকেই জানেন ।
ম্যালেরিয়া জ্বরের ৩ টি অবস্থা
১। শীতাবস্থা ( Cold Stage ), ২ । উষ্ণাবস্থা ( Hot Stage ) ৩। ঘর্মাবস্থা ( Sweating Stage ) ।
ম্যালেরিয়া জ্বরের সচরাচর এই তিনটি অবস্থা দেখা যায় । অর্থাৎ শীত করিয়া জ্বর আসা , তৎপর শরীর উষ্ণ হইয়া গাত্রতাপ বৃদ্ধি হওয়া এবং ঘাম দিয়া জ্বর একেবারে ছাড়িয়া যাওয়া । জ্বরে অত্যাধিক পিপাসা হয় । এই তিনটি লক্ষণের ষ্পষ্ট সমাবেশ দেখিলে তাহাকে ম্যালেরিয়া বলিয়া বুঝিতে হয় ।
অনেক সময় দেখা যায় , প্রায়ই ম্যালেরিয়া জ্বর কোন এক নিরুপিত সময়ে আসে । কিন্তু মাঝে মাঝে আবার ব্যতিক্রম ঘটে । তাই তাহাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় ।
১ । প্রত্যহ একবার জ্বর ।
২ । একদিন অন্তর জ্বর বা পালি জ্বর ।
৩ । দুইদিন অন্তর জ্বর বা পালি জ্বর ।
অবিরাম ম্যালেরিয়া জ্বর ঃ এই প্রকারের ম্য়ালেরিয়া জ্বর সকল সময় থাকে এবং টাইফয়েডের সহিত ইহার ভুল হইতে পারে । তবে কখনও জ্বরের মাত্রা কমে, আবার কখনও বৃদ্ধি পায় , কিন্তু Step Ladder like হয় না । রোগীর জিহ্বা শুকনা এবং বাদামী রং হয় । অনেক সময় রোগীর ডায়রিয়াও দেখা যায় ।
ক্রোণিক অবস্থাঃ কিছুদিন জ্বর হয় , আবার কমিয়া যায় , আবার জ্বর হয় । এমনভাবে বার বার জ্বর হইলে প্লীহা বাড়ে । অনেক দিন পর প্লীহা শক্ত হয় , লিভার বাড়ে ও রক্তহীনতা দেখা যায় । পরিশেষে চক্ষু হলদে হয়, অর্থাৎ রোগী জন্ডিসে আক্রান্ত হয় । তবে আজকাল ক্রোণিক ম্যালেরিয়া বিশেষ দেখা যায় না ।
ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া ( পার্নিসাস ম্যালেরিয়া ) ঃ এইসব রোগীর জ্বর দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা ১০৪ - ১০৭ ডিগ্রী উঠিতে পারে । রোগী ভুল বকে এবং অজ্ঞান হয় । অনেক সময় মাথায় অবিরত পানি ঢালিলেও জ্বর কিছুতেই নামিতে চাহে না । রক্ত পরীক্ষা করিলে ম্যালেরিয়া জীবাণু পাওয়া যায় । সেইজন্য সম্ভব হইলে রক্ত পরীক্ষা করিয়া রিপোর্টের উপর নির্ভর করিয়া সঙ্গে সঙ্গে কুইনাইন ইনজেকশন দিতে হয় ।
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা ঃ
নিম্নলিখিত ঔষধ ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করিতে পারে । তাই প্রয়োজনমত নিচের দুই একটা ঔষধ সেবন করা যাইতে পারে ।
১ । Chloroquine phos. ( ক্লোরাকুইন ফসফেট ) যুক্ত ঔষধ ঃ Tab. Pharmaquine ( ফার্মাকুইন ) বা, Tab. Nivaqine-P ( নিভাকুইন পি )বা, Tab.Resochin ( রিসোসিন ) বা, Tab. Avloquin ( এ্যাভলোকুইন ) বা, Tab. Malaquine ( ম্যালাকুইন ) বা, Tab. Neoquin ( নিয়োকুইন ) ।
মাত্রাঃ প্রথমে ২৫০ মিঃ গ্রাঃ এর ৪ টি বড়ি একসাথে তার পরে ২ টি বড়ি ৬ঘন্টা পর । পরের দিন হইতে ১ টি বড়ি দিনে ২ বার ৩ দিন । কম বয়স্কদের মাত্রা বড়দের অর্ধেক । ২ - ৫ বৎসর সিকি মাত্রা । ( ২ + ০ + ২ ) দিন এবং ১ + ০ + ১ পরের ৩ দিন ।
বাচ্চাদের জন্য ঃ Seemaquine ( সিমাকুইন ) বা, Avloquin Syrup ( এ্যাভলোকুইন সিরাপ ) বা, Nivaquine Syrup ( নিভাকুইন সিরাপ ) বা, Chlorolin Syrup ( ক্লোরোলিন সিরাপ ) বা, Quinal Syrup ( কুইনাল সিরাপ ) ।
মাত্রাঃ ১ বৎসরের নীচে ১/২ চামচ খাবার ৬ ঘন্টা পর পর ১ দিন । তারপর দিন থেকে ১ চামচ করে দিনে ২ বার ৩ দিন । ৪/৫ বৎসরের উপরে হলে প্রথমে ২ চামচ করে দিনে ২ বার । তার পর ১/২ চামচ দিনে ২ বার ৩ দিন । অথবা,
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ঃ Tab. Premaquine ( প্রিমাকুইন ) ১৫ মিঃ গ্রাঃ প্রত্যহ ১ টি বড়ি করে রোজ ২ বার ১৪ দিন ।
২ । তবে ম্যালিরিয়া জ্বর অনুমান বা সন্দেহ করিলে বা প্রতিরোধক হিসাবে Sulfadoxine + Pyrimethamine যুক্ত ঔষধ যেমন- Tab. Malodoxin বা, Tab. Malacide বা, Tab. Malarix বা, Tabl. Soloprin বা, Tab. Salfamin বা, Tab. Sulsider
মাত্রাঃ ৩ বড়ি রাত্রে একবার মাত্র এবং পুনরায় ৭ দিন পর আবার ১ মাত্রা ।
৩ । কুইনাইন ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অন্য লক্ষণগুলির ও ঔষধ দিতে হয় । হইার মধ্যে রক্তশূন্যতা প্রধান । তাই রোগীকে Iron মিশ্রিত টনিক ব্যবহার করিতে দিতে হইবে । কেননা , রোগী রক্তহীন হয় বলিয়াই এমন ঔষধের প্রয়োজন দেখা দেয় ।
Syrup. Ferrocip বা, Syrup . Microferon বা, Syrup. Ferrolysin বা, syrup. May- flower বা, Dyaferron বা, Syrup . Aristoferron বা, Syrup. Ferocin
সেবন বিধিঃ ১/২ চামচ করিয়া দৈনিক ৩ বার আহারের পর সেব্য ।
* বিঃদ্রঃ গর্ভবতী স্ত্রীলোরের জন্য এবং রক্তশূন্যতায় quinine বড়ি বা, Injection ব্যবহার করিতে নাই , কেননা উহাতে গর্ভপাত হইতে পারে । তবে পানিসাস ম্যালেরিয়া হইলে অনুমতি লইয়া রোগীণীর প্রাণ রক্ষার্থে উহা ব্যবহার করা যাইতে পারে ।
পথ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাঃ
১। বেশী অসুবিধা হলে বরফ বা ঠান্ডা পানি দ্বারা হাত - পা, শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে ।
২। বেশী জ্বর মাথায় প্রচুর পানি দিতে হইবে ।
৩ । ম্যালেরিয়া হলে রক্ত পরীক্ষায় MP-test পজেটিভ ( + ve ) হইবে ।
৪। জ্বর বৃদ্ধি পাইলে বমি হইতে পারে বলিয়া জ্বরের প্রথম অবস্থায় গরম পানি ও তাহার সহিত লেবুর রস খাইতে দেওয়া যায় ।
৫ । জ্বর ছাড়িয়া যাইবার পর সাগু , বার্লি খাইতে দেওয়া যায় । তবে চিকিৎসার পর জ্বর বন্ধ হইলে সাগু, সাগুভাত , ছোট মাছের ঝোল ও পরিশেষে ভাত দেওয়া যায় ।
৬ । স্যাৎ - সেঁতে জায়গায় থাকা উচিত নয় ।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment